পাইলট হওয়ার যোগ্যতা
- আপডেট সময় : ০৪:০৬:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অগাস্ট ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
আকাশে ওড়ার ইচ্ছা আমাদের সবাই আছে। কিন্তু সেই ওড়ার ইচ্ছা টাকে যদি পেশায় পরিণত করা যায় তাহলে কেমন হয়? তাইতো পাইলট হওয়ার যোগ্যতা কি কি সে সম্পর্কে আমি আপনাদের সামনে আজকে হাজির হয়েছে। একজন পেশাদার পাইলট হয়ে আকাশে উড়তে কি কি যোগ্যতা লাগে এবং প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয় চলুন সেগুলোর বিস্তারিত জেনে নেই।
পাইলট হওয়ার যোগ্যতা
পাইলটরা সাধারণত ২ টি ক্যাটাগরিতে কাজ করে থাকে। একটি হচ্ছে সামরিক এবং অপরটি হচ্ছে বেসামরিক।
সামরিক পাইলট মনে হচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনী যেমন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য আকাশযান চালিয়ে থাকেন।
বেসামরিক পাইলটরা সাধারণত বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে কর্মরত থাকেন সেগুলো বিভিন্ন দেশে যাত্রী বহন করে থাকে। তাই ধরন বেধে পাইলট হওয়ার জন্য প্রয়োজন বিশেষ যোগ্যতা এবং প্রশিক্ষণ। বেসামরিক ফিল্ডে বিমান চালানোর যাবতীয় বিষয় গুলো সিভিল আভিয়েশন অথরিটি অফ বাংলাদেশ বা ক্যাব নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা আপনাকে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।
প্রথমে চলুন জেনে নেই সামরিক বা সরকারি পাইলট হওয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অধীনে ফ্লাইং কোর্সে পাইলট নিয়োগ দেয়া হয়। এই কোর্সে আবেদন করার জন্য অবশ্যই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। সেই সাথে সর্বনিম্ন জিপিএ ৪.৫০ থাকতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বিমানবাহিনীর নীতিমালা অনুযায়ী তার থেকে অবশ্যই শারীরিকভাবে ফিট থাকতে হবে। সার্কুলার প্রকাশের পর ফ্লাইং কোর্সে আবেদন করতে হয়। তারপর সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি ধাপে নিয়োগ পরীক্ষার সম্পন্ন হয়।
চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদেরকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অধীনে ফ্লাইং কোর্স করানো শেষে ফ্লাইং অফিসার হিসেবে বিমানবাহিনীতে কমিশন প্রদান করা হয়।
তারপর সামরিক বাহিনীতে চাকুরী প্রমোশন এবং অন্যান্য বিভাগে পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়।
বেসামরিক পাইলট হওয়ার যোগ্যতা কি
সাধারণভাবে পাইলট হতে চাইলে বেশ কিছু কোর্স করতে হয়। এ সকল কোর্সের জন্য এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে ইতিমধ্য যারা অনার্স বা স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তারাও আবেদন করতে পারবেন।
বয়স সর্বনিম্ন ১৬ বছর হতে হবে এবং শারীরিকভাবে ফিট ও ইংরেজিতে দক্ষ থাকতে হবে। শারীরিক গঠন ও ইংরেজিতে দক্ষতা পাইলট হওয়ার যোগ্যতা গুলোর মধ্যে অন্যতম।
পাইলট হওয়ার যোগ্যতা: পাইলট কোর্স
সকল যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আপনি পাইলট কোর্সের ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে পারবেন। শুধুমাত্র এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পাইলট কোর্স করার জন্য সুযোগ পেয়ে থাকে।
বিভিন্ন বিষয়ে মৌখিক এবং লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষতাও যাচাই করা হয়ে থাকে।
পাইলট কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরে মূল কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকে। পুরো কোর্সটিতে কয়েকটি ভাগ থাকে।
১. গ্রাউন্ড কোর্স
২. প্রাইভেট পাইলট কোর্স
৩. কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স
পাইলট হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ কোর্সটি শেষ করতে সব মিলিয়ে ৩ বছর সময় লাগে। পুরো করছে প্রথম ভাগের সাধারণত থিউরি গুলো শেখানো হয়।
এক্ষেত্রে বিমানের কারিগরি, এ সম্পর্কিত যাবতীয় আইন ও নিয়ম কানুন, বিভিন্ন এয়ারক্র্যাফ্ট সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান, নেভিগেশনসহ নানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
পাইলট হওয়ার যোগ্যতা
প্রথম ধাপের কোর্স শেষ হলে দ্বিতীয় ধাপের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই পরবর্তী ধাপে অংশগ্রহণ করার জন্য সুযোগ পায় এবং ৪০ থেকে ৫০ ঘন্টা বিমান চালানোর জন্য অনুমতি পায়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে শেষ হলে তৃতীয় পর্যায়ে প্রাইভেটরা পিপিএল বা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারে। এই ধাপে পাইলটদেরকে একটি জেলা হতে অন্য জেলায় বিমান চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যদিও পিপিএল লাইসেন্স পাওয়ার পর বাণিজ্যিক বিমান চালানোর অনুমতি মিলে না। বাণিজ্যিক বিমান চালানোর জন্য কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়।
অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে গেলে কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ ঘন্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
পাইলট কোর্স কোথায় করা যায়
পাইলট হওয়ার যোগ্যতা গুলি সম্পর্কে তো জানলেন এবার চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের কোথায় পাইলট কোর্স করতে পারবেন। বাংলাদেশে নিম্নোক্ত বৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি পাইলট হওয়ার কোর্স করতে পারবেন:
১. বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার
২. বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমী এন্ড ফ্লায়িং এভিয়েশন লিমিটেড।
৩. সিভিল এভিয়েশন একাডেমি ট্রেনিং সেন্টার
৪. আরিরাং এভিয়েশন লিমিটেড
দেশীয় এসকল প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আপনার পাইলট হওয়ার যোগ্যতার সাপেক্ষে দেশের বাইরেও যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স সম্পন্ন করতে পারবেন।
পাইলট হওয়ার খরচ কেমন
আপনি যদি বেসরকারি ভাবে পাইলট হতে চান তাহলে পুরো কোর্সটি সম্পন্ন করার জন্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের ধারণা অনুযায়ী এটি কিছুটা কম এবং বেশি হতে পারে। আপনার যদি বেসামরিকভাবে পাইলট হওয়ার কোর্স নিতে ইচ্ছে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা হাতে নিয়ে তারপর কোর্স শুরু করা উচিত। কারণ টাকার সমস্যার কারণে অনেকের রিয়েল টাইম লাইট ট্রেনিং আটকে যায়। যার কারনে কোর্সটি সম্পন্ন করতে আরও বেশি সময় লাগে।
পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার কেমন
একজন পাইলট সরকারি বা বেসরকারি যে কোন খাতে কাজ করতে পারেন। যেমন বিমান বাহিনীতে বা অন্যান্য প্রতিরক্ষা বাহিনীতে পাইলট হিসেবে যোগদান করলে প্রমোশনের সুযোগসহ সরকারি বিভিন্ন বেতন ভাতা পাওয়া যায়। সেই সাথে বিদেশে মিশনে গিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমনকি ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি হতে অবসর নিয়েও বেসরকারি গুলোতে জব করা যায়।
আবার বেসামরিক পাইলটদেরও চাহিদা অনেক। একটি প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৭ হাজার নতুন পাইলটের প্রয়োজন হয়।
পাইলটদের বেতন কেমন
পাইলট হওয়ার যোগ্যতাও যেমন বেশি তেমন পাইলটদের বেতনও বেশি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অর্থাৎ প্রথমদিকে একজন পাইলটের বেতন সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা হয়ে থাকে। সেই সাথে অভিজ্ঞতা বাড়ার পাশাপাশি এই বেতনের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
আপনারা যারা পাইলট হিসেবে নিজেকে গড়তে চান তারা পাইলট হওয়ার যোগ্যতা গুলোর সম্পর্কে ভালোভাবে জানা। তারপর আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলে বেসামরিক কোর্সগুলো করতে পারেন। শারীরিকভাবে ফিট এবং ডিফেন্সে কাজ করার ইচ্ছে থাকলে বিমান বাহিনীতে ফ্লাইং কোর্সে আবেদন করতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে টাইটানিক এর গান বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।