ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিপোর্ট। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং জনসাধারণের মাঝে তিনি ডিবি হারুন নামেই সবচাইতে বেশি পরিচিত।

আলোচিত এই ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টসহ নানা রকম জালিয়াতি এর অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির নেওয়া সহ অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি খোঁজ পাওয়া গেছে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে প্রায় শত কোটি টাকা খরচ করে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে একটি বিলাসবহুল প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন।

কিশোরগঞ্জের মিঠামাইনের স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এই রিসোর্টে রয়েছে হেলিপ্যাড সহ অত্যাধুনিক সুইমিংপুল এবং সুযোগ সুবিধা। হেলিকপ্টারে করে প্রায়ই নাকি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং বৃত্তশালীরা এখানে সময় কাটাতে আসতেন। ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট টি তাদের কাছে বেশ আনন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠেছিল।

কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামাইন উপজেলা ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ডিবি হারুনের জন্য। তিনি একটি সাধারণ কৃষক পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০ তম বিসিএস এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন তিনি। অথচ জানা গেছে তার বাবা মোঃ হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ডিবি হারুনের বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে।

এরপরে ২০১১ সালের ৬ই জুলাই সংসদ ভবনের সামনে বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন ফারুক কে মারধর করে আলোচনায় আসেন ডিবি হারুন। সেই সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। তারপর থেকে একের পর এক প্রমোশন পেয়ে বেশ প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট

ডিবি হারুন এর প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট টি ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। ওই রিসোর্ট এর প্রিমিয়াম স্যুটের ভাড়া প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টাকা। সেই সাথে সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এটি খুবই বিলাসবহুল একটি রিসোর্ট বলেই পরিচিত।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট টি উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। উক্ত রিসোর্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারই ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে তার জায়গা রয়েছে ৫ থেকে ৭ একর। রিসোর্ট এর প্রায় বাকি ৩৫ একর জায়গা অন্যান্য লোকদের। অভিযোগ আছে তিনি বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে এর সকল জমির দখল নেন। মালিকদের কাউকেই প্রকৃত মূল্য দেওয়া হয়নি। যাদের প্রাপ্য ১০ লাখ টাকা তাদেরকে দিয়েছেন ১ লাখ টাকা এবং যাদের প্রাপ্য ২০ লাখ টাকা তাদের মধ্যে দিয়েছেন ২ লাখ টাকা।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে জমি বিক্রি করার জন্য সঠিক দাম পাননি বলে অনেকেই তাকে রেজিস্ট্রি করে দেননি।। স্থানীয় একজন লোকের সাথে কথা বলে জানা যায় তার ১০ শতাংশ জায়গায় বিনিময়ে মূল্য দেয়া হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। অথচ ওই জমির বর্তমান দাম হবে প্রায় ২০ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য ৪ ভাইয়ের মধ্যে ডিবি হারুন সবচাইতে বড়। তারপরে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের উপ-পরিদর্শক। হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জের থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন কে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মুখের দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। তারপর থেকেই ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টটি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু রিসোর্ট বুকিং এখনো চালু রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট

আপডেট সময় : ১১:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিপোর্ট। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং জনসাধারণের মাঝে তিনি ডিবি হারুন নামেই সবচাইতে বেশি পরিচিত।

আলোচিত এই ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টসহ নানা রকম জালিয়াতি এর অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির নেওয়া সহ অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি খোঁজ পাওয়া গেছে তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে প্রায় শত কোটি টাকা খরচ করে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে একটি বিলাসবহুল প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন।

কিশোরগঞ্জের মিঠামাইনের স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এই রিসোর্টে রয়েছে হেলিপ্যাড সহ অত্যাধুনিক সুইমিংপুল এবং সুযোগ সুবিধা। হেলিকপ্টারে করে প্রায়ই নাকি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং বৃত্তশালীরা এখানে সময় কাটাতে আসতেন। ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট টি তাদের কাছে বেশ আনন্দের একটি জায়গা হয়ে উঠেছিল।

কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামাইন উপজেলা ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ডিবি হারুনের জন্য। তিনি একটি সাধারণ কৃষক পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০ তম বিসিএস এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন তিনি। অথচ জানা গেছে তার বাবা মোঃ হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ডিবি হারুনের বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে।

এরপরে ২০১১ সালের ৬ই জুলাই সংসদ ভবনের সামনে বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন ফারুক কে মারধর করে আলোচনায় আসেন ডিবি হারুন। সেই সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। তারপর থেকে একের পর এক প্রমোশন পেয়ে বেশ প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট

ডিবি হারুন এর প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট টি ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। ওই রিসোর্ট এর প্রিমিয়াম স্যুটের ভাড়া প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টাকা। সেই সাথে সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এটি খুবই বিলাসবহুল একটি রিসোর্ট বলেই পরিচিত।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট টি উদ্বোধন করা হয় ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। উক্ত রিসোর্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারই ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে তার জায়গা রয়েছে ৫ থেকে ৭ একর। রিসোর্ট এর প্রায় বাকি ৩৫ একর জায়গা অন্যান্য লোকদের। অভিযোগ আছে তিনি বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে এর সকল জমির দখল নেন। মালিকদের কাউকেই প্রকৃত মূল্য দেওয়া হয়নি। যাদের প্রাপ্য ১০ লাখ টাকা তাদেরকে দিয়েছেন ১ লাখ টাকা এবং যাদের প্রাপ্য ২০ লাখ টাকা তাদের মধ্যে দিয়েছেন ২ লাখ টাকা।

ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে জমি বিক্রি করার জন্য সঠিক দাম পাননি বলে অনেকেই তাকে রেজিস্ট্রি করে দেননি।। স্থানীয় একজন লোকের সাথে কথা বলে জানা যায় তার ১০ শতাংশ জায়গায় বিনিময়ে মূল্য দেয়া হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। অথচ ওই জমির বর্তমান দাম হবে প্রায় ২০ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য ৪ ভাইয়ের মধ্যে ডিবি হারুন সবচাইতে বড়। তারপরে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের উপ-পরিদর্শক। হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জের থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন কে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মুখের দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। তারপর থেকেই ডিবি হারুনের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টটি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু রিসোর্ট বুকিং এখনো চালু রয়েছে।