এমপক্স কি এবং কীভাবে ছড়ায়
- আপডেট সময় : ১২:৪৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এমপক্স ভাইরাস। যার কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরি জনস্বার্থে অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আপনাকে কি জানেন এমপক্স কি? এক সময়ে মান্কিপক্স নামে পরিচিত এ সংক্রামক রোগটির কারণে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইতিমধ্য প্রায় সাড়ে চারশো অধিক মানুষ মারা গিয়েছে।
এমপক্স কি এবং কিভাবে ছড়ায়
এমপক্স রোগের জন্য দায়ী মান্কিপক্স নামের একটি ভাইরাস। স্মলপক্স কিংবা গুটি বসন্তের জন্য দায়ী ভাইরাসদের মতো এটিও একই শ্রেণীভুক্ত। তবে এটি গুটি বসন্তের মতো মারাত্মক ভাইরাসের চেয়ে বেশ কম ক্ষতিকর। মান্কিপক্স ভাইরাসটির প্রথম দিকে পশুদের মধ্যেও ছড়াতে শুরু করলেও কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে।
এমপক্স ভাইরাস প্রধানত আফ্রিকার বৃষ্টি প্রধান গ্রামীণ এলাকা গুলোতে সবচাইতে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই ভাইরাসের সবচাইতে বেশি আক্রান্ত কঙ্গো প্রজাতন্ত্র।
এ সকল অঞ্চলে এমপক্স রোগের কারণে প্রতিবছর প্রায় কয়েক হাজার মানুষ অসুস্থ হন এবং কয়েকশো মানুষ মারা যান। সবচাইতে ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং কিশোর।
এমপক্স কি এবং কিভাবে ছড়ায়
এর আগে ২০২২ সালে একবার স্বাস্থ্য সংস্থা এটি নিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।
এমপক্স ভাইরাসের মূলত দুটি ধরনের একটি হচ্ছে ক্লেড-১ এবং আরেকটি হচ্ছে ক্লেড-২। এর আগে ক্লেড-২ নিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও বর্তমানে এর চেয়ে আরও শক্তিশালী ক্লেড-১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই সংক্রমণ রোগটি রূপ পরিবর্তন করে। রূপ পরিবর্তন করে নতুন করে হয়েছে প্লেট-১বি। এটিকে বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা সবচাইতে বিপদজনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এমপক্স রোগের উপসর্গ
এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে জ্বর, মাথাব্যথা এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে শুরু করে। সেই সাথে কিছু পরিমাণে পেশিতে ব্যথা এবং পিঠেও ব্যথা হয়ে থাকে। তবে জ্বর শরীরে ছেড়ে যাওয়ার পর শরীরে বিভিন্ন রকম ফুসকড়ি দেখা দেয় এবং মুখমন্ডলের অন্যান্য অংশ ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে আক্রান্ত রোগীর বিভিন্ন রকম চুলকানি এবং ভীষণ ব্যাথা হতে পারে। একসময় চূড়ান্ত ভাবে খোসপচড়ায় রূপান্তরিত হয়। শুকিয়ে যায় এবং শরীরে নানা রকম ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়।
সাধারণত এমপক্স রোগে আক্রান্ত রোগী নিজে নিজে ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যেও সেরেও ওঠে। তবে রোগীর অবস্থা যদি অনেক বেশি গুরুতর না হয় তাহলে শরীরে মুখমন্ডলে এবং বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত এবং দাগ দেখা যেতে পারে।
এমপক্স কিভাবে ছড়ায়
আক্রান্ত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এই রোগটি একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শারীরিক সম্পর্ক করা, পাশাপাশি বসে কথা বলা, ত্বকের স্পর্শ এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আক্রান্ত রোগীর ব্যবহার করা বিছানা এবং জিনিসপত্র স্পর্শ করলেও নতুন করে আক্রান্ত হতে পারে কেউ। শুধু এছাড়াও বিভিন্ন রকম পশু যেমন বানর, ইদুর, কাঠবিড়ালি কিংবা বিড়ালের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারেন। মান্কিপক্স ভাইরাসে ২০২২ সালের ছড়িয়ে পড়ে মূলত অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের কারণে।
সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে কারা
শারীরিক স্থাপনের সক্ষম ব্যক্তি এবং সমকামী পুরুষদের মধ্যে এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁটির সবচাইতে বেশি। কিংবা যারা একই সাথে একাধিক সঙ্গীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হন তারাও বেশ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আক্রান্ত রোগের সংস্পর্শে যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
পরামর্শ এবং নিয়ন্ত্রণের উপায়
আপনার আশেপাশে কিংবা কমিউনিটির মধ্যে যদি এই রোগটি দেখা যায় তাহলে সম্ভব তাদের স্পর্শ হতে দূরে থাকুন। এমনকি বাহির থেকে এসে নিয়মিত সাবান এবং পানি দিয়ে সঠিকভাবে হাত ধরে নিন।
তাছাড়া এমপক্স রোগে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে আপাতত একা একটি স্থানের কোয়ারেন্টাইনে রাখা উচিত। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আক্রান্ত রোগী সেরে ওঠার পরেও ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনডম ব্যবহার করা উচিত।
এমপক্স রোগটি প্রতিরোধ করার সবচাইতে উত্তম উপায় হচ্ছে এর টিকা গ্রহণ। যারা ইতিমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত রোগের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের জন্য টিকে নেওয়া অতি উত্তম।